





২০১৭ সালের ২২ আগস্ট। নায়করাজ রাজ্জাকের মরদেহ এফডিসিতে রাখা। তাকে ঘিরে সবাই ব্যস্ত।






কেউ কাঁদছেন, কেউ ফুল দিচ্ছেন। কেউ আবার সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন। চলচ্চিত্রের






মানুষ, পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও দেখা গেল জহির রায়হান প্রজেকশন হলের সামনের আঙিনায়।






তবে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল একজনকে। একটি গাড়ির আড়ালে নিজেকে গোপন করে রেখেছেন। একদৃষ্টিতে উদাস হয়ে তাকিয়ে আছেন অগ্রজ নায়করাজের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের দিকে। চোখে-মুখে বিষাদের কালো ছায়া। পরনেও কালো রঙের পোশাক। তিনি আলীরাজ। ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় মুখ।
এগিয়ে যেতেই পাশ ফিরে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। পরিচিত মুখ দেখে নিজেই বলতে লাগলেন, ‘কী মানুষ কোথায় চলে গেল। তার অভাব কে পূরণ করবে? কেউ পারবে না!’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে থেমে গেলেন। বাধ্য হয়েই জিজ্ঞেস করতে হলো, রাজ্জাক সাহেবের হাত ধরেই তো আপনি চলচ্চিত্রে এসেছিলেন তাই না? জবাবে স্মৃতির ঢালা সাজিয়ে দিলেন।
বললেন, ‘শুধু চলচ্চিত্রেই আসিনি, তার হাত ধরে বাবা-মায়ের দেয়া নামও বদলে ফেলেছিলাম। আমার পারিবারিক নাম আনোয়ার হোসেন। বিটিভিতে অভিনয়ের জন্য আবেদন করার সময় বন্ধু আনোয়ার হোসেন বুলু নাম লিখে দেন ডাব্লু আনোয়ার। এরপর ডব্লিউ আনোয়ার বদলে রাজ্জাক ভাই আলীরাজ নামটি দিয়েছিলেন সিনেমায়। আজও আমি আলীরাজ।’
আলীরাজ পুরনো দিনে হারিয়ে গিয়ে বলেন, ‘আশির দশকের শুরুতে রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। আমি তখন ঢাকা থিয়েটারের কর্মী। টিভিতেও কাজ করতে শুরু করেছি। একদিন কথায় কথায় বললেন চলচ্চিত্রে কাজ করতে। বললাম
সেই সুযোগ আমাকে কে দেবে? বললেন, আমি দেব। আমার হাত ধরে অনেক মেয়েই নায়িকা হয়েছে। তবে একজন নায়ক আমি বানাতে চাই। তারপর একদিন ডেকে বললেন, তিনি সিনেমা পরিচালনা করছেন। আমিও সেখানে তার ছোট ভাইয়ের চরিত্রে কাজ করব।
ছবির নাম ‘সৎভাই’। ১৯৮৩ সালে ছবিটির শুটিং শুরু হয়েছিল। এটি মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে। কী দারুণ ব্যবসাসফল ছিল সেই ছবি। লোকে আমার নামের শেষে ‘রাজ’ দেখে ভেবেছিল আমি বুঝি সত্যি নায়করাজের ভাই। অনেকে আমাকে সেই প্রশ্ন করেছে। আমিও নীরব থেকে হেসে মজা নিয়েছি।’
আজ ১৫ মার্চ নন্দিত এই অভিনেতার জন্মদিন। তিনি সিরাজগঞ্জের সন্তান। করোনার কারণে তেমন একটা বাইরে আসেন না তিনি। ঘরে পরিবারের সঙ্গেই কাটছে তার জন্মদিন।
আশির দশকে টিভি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে অভিষেক ঘটে আলীরাজের। বিটিভিতে সেলিম আল দীনের লেখা ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নির্দেশনায় ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন।
ছেলেবেলায় সিরাজগঞ্জে থাকতেই বর্ণালী ক্লাবের সাথে অভিনয় শুরু করেন। এরপর কাজ করেছেন তরুণ সম্প্রদায়, দুর্বার, সংলাপ থিয়েটারে। ঢাকায় চলে আসার পর ঢাকা থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। সেখানে তার সহ অভিনেতা ছিলেন হুমায়ূন ফরিদী, আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তাফা, রাইসুল ইসলাম আসাদের মত অভিনয় তারকারা।
প্রায় একশটিরও বেশি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। চরিত্রাভিনেতা হিসেবে তিনি অগণিত চলচ্চিত্রে
অভিনয় করেছেন। স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৬ সালে ‘পুড়ে যায় মন’ ও ২০১৮ সালে ‘জান্নাত’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি।