





বলিউডের সর্বকালের সেরা সুন্দরী অ’ভিনেত্রী মধুবালা। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তার জন্ম হয়েছিল






বলেই হয়তো তার ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়েছিল চলচ্চিত্র, দর্শক, নির্মাতা, সহশিল্পী এমনকি তামাম






দুনিয়ায়।তাইতো আজও প্রে’মের দেবী ভেনাসের সঙ্গে কারও তুলনা করতে গেলে প্রথমেই নির্দ্বিধায় চলে আসে মধুবালার নাম।






৩৬ বছরের ক’ষ্টের জীবন
জন্ম নিয়েছিলেন হৃৎপিন্ডে ছোট একটি ছিদ্র নিয়ে। বয়স যখন ২৭ বছর, ডাক্তার জানিয়ে দেন আর






মাত্র বছর দুয়েক বাঁচবেন তিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করে দিয়ে দৃঢ়চেতা মধুবালা বেঁচে






ছিলেন আরও নয়টি বছর। ভা’রতীয় কিংবদন্তি এই অ’ভিনেত্রী ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে চিরবিদায় নেন। মধুবালা জন্মেছিলেন ১৯৩৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
যে কারণে অ’ভিনয়ে আসা
মধুবালা একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পা’কিস্তানের পেশোয়ারের টোব্যাকো কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার চাকরি চলে যাওয়ায় সংসারের অভাব দূর করতে মাত্র নয় বছর বয়সে অ’ভিনয়ে নামেন মধুবালা। তার পরিবার আরও অসহায়ত্বের মাঝে পড়ে যখন পাঁচ-ছয় বছর বয়সেই তার পাঁচ ভাই-বোন মা’রা যায়। এরপর ১৯৪৪ সালের ১৪ এপ্রিল মুম্বাই ডকে বি’স্ফোরণের ঘটনায় হারিয়ে যায় তাদের ছোট্ট ঘরটিও।
পরিবারের এমন দুর্দশার মধ্যে একমাত্র আশার আলো ছিলেন মুমতাজ জাহান। তিনি ছিলেন তাঁর পরিবারের প্রধান অর্থ উপার্জনকারী। নিজে পরিশ্রম করে মা এবং চার বোনের অন্ন সংস্থান করেছিলেন। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চ’ম। ১৯৪৭ সালে তিনি ১৪ বছর বয়সে ‘নীল কমল’ সিনেমা’র প্রধান ভূমিকায় অ’ভিনয় করেন। ১৯৪২ থেকে ১৯৬০ সালের অ’ভিনয় জীবনে ৭০টির মতো চলচ্চিত্রে অ’ভিনয় করেছেন মধুবালা।
এ অ’ভিনেত্রীর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘অম’র’, ‘আরমান’, ‘মুঘল-ই-আজম’, ‘বারসাত কি রাত’, ‘তারানা’ ‘পাসপোর্ট’, ‘দুলারি’, ‘বেকুসুর’ ইত্যাদি।
হলিউডের চলচ্চিত্রে আমন্ত্রণ
পঞ্চাশের দশকে মধুবালা ছিলেন ভা’রতের অন্যতম জনপ্রিয় ও সফল অ’ভিনেত্রী। কেবল নিজ দেশে নয়, হলিউডের মনোযোগও আকর্ষণ করেন এ অনিন্দ্য হাসির অধিকারিণী।
আ’মেরিকান ম্যাগাজিন ‘থিয়েটার আর্টস’-এর ১৯৫২ সালের আগস্ট ইস্যুতে মধুবালাকে নিয়ে যে ফিচারটি লেখা হয়, তার শিরোনাম দেওয়া হয় ‘দ্য বিগেস্ট স্টার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড- অ্যান্ড শি ইজ নট ইন বেভা’রলি হিলস’। অস্কারজয়ী আ’মেরিকান নির্মাতা ফ্রাংক কাপ্রা চেয়েছিলেন মধুবালাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে। কিন্তু হলিউডের সে আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেন তার বাবা আতাউল্লাহ।
মধুবালার যত প্রে’ম
মধুবালার জীবনে প্রে’মের তরী ভিড়িয়েছিলেন অনেক পুরুষ, তার মধ্যে অ’ভিনেতা দিলীপ কুমা’রের নাম বোধহয় সবচেয়ে বেশি’বার এসেছে। এ জুটির প্রথম দেখা হয় ‘জোয়ার ভাটা’ ছবির সেটে, ১৯৪৪ সালে। ১৯৫১ সালে দিলীপ কুমা’রের সঙ্গে ‘তারানা’ ছবিতে অ’ভিনয়ের সময় তারা একে অ’পরের প্রে’মে পড়েন।
শুটিং চলাকালীন একদিন মধুবালা তার হেয়ার ড্রেসারকে দিয়ে একটি লাল গো’লাপ ও উর্দুতে লেখা চিরকুট দিলীপ কুমা’রের কাছে পাঠান এবং তাকে ভালোবাসলে ফুলটি গ্রহণ করতে বলেন। দিলীপ কুমা’র মুগ্ধ হয়ে ফুলটি গ্রহণ করেন। বাস্তবে এ জুটির স’ম্পর্ক ছিল পাঁচ বছর। বিয়ে পর্যন্ত না গেলেও এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয়েছিল তাদের।
বিয়ের জন্য দিলীপ কুমা’র নাকি মধুবালাকে দুটো শর্ত দিয়েছিলেন। এক. বিয়ের পর নিজের পরিবারের সঙ্গে স’ম্পর্ক রাখা যাবে না, দুই. অ’ভিনয় ছাড়তে হবে। পর্দা জীবন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করতে পারলেও পরিবার ছাড়তে রাজি ছিলেন না মধুবালা। এরপরই ভেঙে যায় তাদের স’ম্পর্ক। তবে এ অ’ভিনেত্রীর বোন জানান, একটি কোর্ট কেসের জন্য স’ম্পর্ক ভাঙে দিলীপ-মধুবালার।
ফের দিলীপের কাছাকাছি
দিলীপ কুমা’র ও মধুবালার স’ম্পর্কের উত্থান পতনের সাক্ষী ছিল কালজয়ী হিন্দি সিনেমা ‘মুঘল-ই-আজম’। তাদের স’ম্পর্কের ভাঙনের সুর যখন ছড়াতে শুরু করেছে, তখন পরিচালক কে আসিফ তাদের কাছে আসেন এ সিনেমা নিয়ে। তিনি চেয়েছিলেন তাদের বাস্তব জীবন মন দেওয়া নেওয়ার রসায়ন যাতে জীবন্ত হয়ে ফুটে ওঠে রুপালি পর্দায়। নয় বছর ধরে নির্মিত হওয়া এ সিনেমাটি সাক্ষী হয় আরও বেশ কিছুর। দিলীপ কুমা’র-মধুবালার বাস্তব জীবনের তুমুল প্রে’ম, সে প্রে’মে ভাঙনের সুর, এরপর বেদনা-বিধুর বিচ্ছেদ জীবন্ত হয়ে ফুটে ওঠে পর্দার সেলিম-আনারকলির চরিত্রে।
এ সিনেমা’র নির্মাণকালে এমন অনেক সময় গেছে যখন তারা পরস্পরের সঙ্গে কথাও বলতেন না। তবু ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় চেপে রেখে সিনেমা’র কাজটি তারা করেছিলেন নিজেদের সবটুকু দরদ দিয়ে, উপহার দিয়েছেন নিজেদের সেরা অ’ভিনয়। আর এর ফলে সিনেমাটি কেবলমাত্র তাদের ক্যারিয়ার সেরা সিনেমাই নয়, গোটা হিন্দি সিনেমা’র ইতিহাসেই একটি মাইলফলক হয়ে আছে। ‘মুঘল-ই-আজম’ মুক্তি পায় ১৯৬০ সালে।
ভুট্টোর সঙ্গে প্রে’ম
অ’পরূপা সুন্দরী মধুবালার জীবনে প্রে’মিকদের তালিকায় ছিলেন পা’কিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। দেশভাগ হওয়ার আগে ভা’রতে প্রচুর সম্পত্তি ছিল ভুট্টোর। ১৯৫৮ সালে ভুট্টো যখন পা’কিস্তানের মন্ত্রী হন তখনই ভুট্টোকে ভা’রতে যেতে হতো। সেই সূত্রেই অনিন্দ্য সুন্দরী সুপারস্টার অ’ভিনেত্রী মধুবালার সঙ্গে তার আলাপ হয়। মধুবালা তখন ‘মুঘল-ই আজম’ ছবির শুটিং করছেন। মাঝে স’ম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করেছে দিলীপ কুমা’রের সঙ্গে। ম’র্মাহত মধুবালার মন তখন নতুন কাউকে খুঁজে পেতে চাইছে। সেই সময় কানাঘুষা ছিল, জুলফিকার আলী ভুট্টোকেই নাকি খুঁজে নিয়েছিলেন মধুবালা!
শোনা যায় আনারকলির ঝলক দেখতে ভুট্টো প্রায়ই হাজির হতেন ‘মুঘল-ই আজম’ এর সেটে। ভুট্টোর সঙ্গে মধুবালার এই স’ম্পর্ক খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অনেকের মতে, সম্ভবত ভুট্টো বুঝে গিয়েছিলেন তাদের এই স’ম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই; কারণ মধুবালার জন্য তিনি শুধুই একটি ভরসার কাঁধ হতে পারেন। জীবনসঙ্গী হওয়ার মতো তাদের স’ম্পর্ক নেই। আসলে তখনো মধুবালা দিলীপ কুমা’রের প্রে’মে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। প্রে’ম ব্যর্থ হওয়ার ব্যথা তিনি কোনো দিনই ভুলতে পারেননি। এখানেই শেষ হয় মধুবালা-ভুট্টো স’ম্পর্কের র’হস্যময় প্রে’ম কাহিনি।
কি’শোর কুমা’রের সঙ্গে বিয়ে
দিলীপ কুমা’র আর ভুট্টোর সঙ্গে প্রে’মের স’ম্পর্কের সমাধি রচনার পর ১৯৬০ সালে মধুবালা বিয়ে করেন কি’শোর কুমা’রকে। ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ ছবির সেটেই কি’শোর-মধুবালার পরিচয় এবং স’ম্পর্কের শুরু।
মধুবালাকে নিয়ে তার বোনের লেখা জীবনীতে জানা যায়, কি’শোর কুমা’রকে বিয়ে করলেও তিনি দিলীপ কুমা’রকেই ভালোবাসতেন। এমনকি দিলীপ কুমা’রকে দেখানোর জন্যই কি’শোর কুমা’রকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।
যত অর্জন
১৯৫২ সালে আ’মেরিকার বিখ্যাত থিয়েটার আর্টস পত্রিকা মধুবালাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় তারকা’ বলে সম্মানিত করে। ২০০৮ সালে এই অ’ভিনেত্রীকে নিয়ে ভা’রতের স্মা’রক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। ভা’রতীয় সিনেমা’র ইতিহাসে সেরা সুন্দরী হিসেবে তাকে এক বাক্যে মেনে নেয় সবাই।
শুধু অসামান্য রূপই নয়, অ’ভিনয় প্রতিভা’র জো’রে পঞ্চাশের দশকে নার্গিস, মীনা কুমা’রীদের ছাপিয়ে হিন্দি সিনেমায় নিজের সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৮-১৯৬০ সাল পর্যন্ত স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ারে তিনি আরোহণ করেন যশ ও খ্যাতির শীর্ষে। কিন্তু এড়াতে পারেননি নিষ্ঠুর নিয়তিকে। সত্য হয়েছিল সে দরবেশের কথাই, যিনি খুব ছোটবেলায় তাঁকে দেখে বলেছিলেন ‘এ মে’য়ে অনেক খ্যাতি লাভ করবে, কিন্তু সুখী হতে পারবে না’।