Home / বাংলা নিউজ / সাতান্ন বছর বয়সী বাবার বিয়ে দিতে যাচ্ছি একুশ বছর বয়সী মেয়ের সাথে

সাতান্ন বছর বয়সী বাবার বিয়ে দিতে যাচ্ছি একুশ বছর বয়সী মেয়ের সাথে

সাতান্ন বছর বয়সী বাবার বিয়ে দিতে যাচ্ছি একুশ বছর বয়সী মেয়ের সাথে, যে কিনা আমা’র

থেকেও আট বছরের ছোট। কথাটা জেনে সবাই আমাকে পাগল ভাবতে শুরু করলো। আমা’র ছোট

ভাই নিহানতো রাগ করে ইতোমধ্যে ঘর থেকেই বের হয়ে গেছে। তারও ছোট যেই বোনটা আছে নিতি,

ও একটু পর পর হাউমাউ করে কেঁদে উঠছে আর বলছে, “বুবু, তুমি এগুলো কি করতেছো?” আমি ওর কা’ন্নাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বরং উল্লাস করে বলি, “বিয়ে খাবো, বাবার বিয়ে।”

আমা’র পরিকল্পনা জেনে পঁচাশি বছর বয়সী দাদী, যিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকেই নামতে পারেন না সেই দাদীও দিনাজপুর থেকে ট্রেনে করে চলে এলেন ঢাকায়। শুনেছি কানাডায় থাকা ফুপ্পি, অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ছোট চাচ্চু,

লন্ডনে থাকা বড় আব্বু অর্থাৎ বাবার বড় ভাইও প্লেনের টিকিট বুকিং দেয়ার চেষ্টা করছেন। এদিকে আমা’র একমাত্র খালা যাকে আম’রা মণি মা বলে ডাকি তিনি অফিসে ছুটির দরখাস্ত জমা দিয়েছেন। নানা ভাই বাসে উঠেছেন ময়মনসিংহ থেকে, আসতেছেন আমাদের বাসায়। মোহাম্ম’দপুর বাবার দুঃস’ম্পর্কের এক খালা থাকেন। তিনিও জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই একবার আমাদের বাসায় আসবেন। যেই ফোনে সারাদিন বাবা

ছাড়া আর কারও কল আসে না সেই ফোনে একের পর এক কল আসছে। একজনের কল রিসিভ করছিতো অ’পরজনের কল ঢুকে পুত পুত শব্দ হচ্ছে। কাকে রেখে কার সাথে কথা বলবো? কল যেই দিয়ে থাকুক সবার একই জিজ্ঞাসা, “তুই নাকি তোর বাবার বিয়ে দিচ্ছিস?” এতো ফোন পেয়ে আমি তোতাপাখির মতো কল রিসিভ করেই বলতে শুরু করি, “বাবার বিয়ে, আসো। বাবার বিয়ে, আসো।” হঠাৎ একটা কল রিসিভ করে যখন বললাম,

“বাবার বিয়ে, আসো” তখন ওপাশ থেকে এক ভদ্রমহিলা বললেন, “সরি, আপনি কি প্রভা?” প্রশ্ন শুনে মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম নাম্বারটা অচেনা। বললাম, – জ্বী, প্রভা। – আপনার ভাইভা আগামীকাল সকাল দশটায়। – কিসের ভাইভা? – আপনি “কোল্ড ফ্লাইট” কোম্পানির এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পদে রিটেনে টিকেছিলেন। – ও আচ্ছা, কিন্তু আমিতো যেতে পারবো না। বাবার বিয়ে। – সরি.. – বাবার বিয়ে, আসেন।

– হ্যালো। – বললাম তো, বাবার বিয়ে, আসেন। লাইনটা টুট করে কে’টে গেলো। আমি লিস্ট নিয়ে বসেছি, বাবার বিয়ের কেনাকা’টার লিস্ট। চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ভাড়া করা, খাবারের মেনু সেট করা, বর পক্ষ, কনে পক্ষ মিলিয়ে কতজন হবে না হবে সব তালিকা তৈরি করতে হবে।আমি মনোযোগ দিয়ে লিস্ট করছি তখন দাদী খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে লা’ঠিতে ভর করে আমা’র কাছে আসলেন। আমি বললাম, – আমাকে ডাকলেইতো হতো। এইখানে আসতে গেলা ক্যান? – তুই কি সত্যিই আলমকে বিয়ে দিবি। – হ্যাঁ, দেবো তো। – এগুলা কি বলিস দিদিভাই? –

যা জিজ্ঞাসা করেছো তাইতো বললাম। – এই বয়সে ওই টুকুন একটা মেয়েকে বিয়ে করলে মানসম্মান কিচ্ছু থাকবে না। – হুম। – হুম, কি? – বলো, শুনতেছি। – তুই কি লেখিস? – বাবার বিয়ের অনুষ্ঠানের প্লান সেট করছি। আচ্ছা দাদী, তুমি কি ওই রুমেই থাকবা নাকি বদলাবা? – আমি বলি কি, আর তুই উত্তর দেস কি? এগুলো রাখ তো। – ওকে, রাখলাম। বলো। – কার সাথে আলমের বিয়ে? – একটা মেয়ের সাথে।

– কার মেয়ে, কই থাকে, কি করে? – একটা বাবার মেয়ে, ঢাকাতেই থাকে, কিছু করে না। – দেখ তো অবস্থা। – আবার কি? – তুই কি তোর বাপের বিয়ে দিবি নাকি আমাকে মা’রবি? – দুটোই। – আল্লাহ গো! এই বয়সে তুমি আমা’রে আর কি শুনাইবা? শুরু হলো দাদীর কা’ন্নাকাটি। কি বলতে কি বলেছি নিজেই জানিনা। নিতি বলছে, – বুবু, তুমি বাবার বিয়ে দিতে চাও, দাদীকেও মা’রতে চাও? – না, দাদীকেতো মা’রতে চাই না। – একটু আগেইতো বললা। আমি দাদীকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “তুমি ম’রো তা আমি চাই না দাদী। বাবার একমাত্র গার্ডিয়ান তুমি। এই বিয়েতে তোমা’র উপস্থিতি খুব দরকার।”

লেখাঃ Romana Akter – শুদ্ধবালিকা

About Reporter Zara

Check Also

দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায় আমরা সেই ব্যবস্থা করছি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আমার একটা নেতাকর্মী যেন কোনো …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

No comments to show.