





বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমী। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন দর্শকপ্রিয়






অনেক চরিত্রে। নতুন খবর হলো, মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মধুসূদন দেকে (মধু দা)






কেন্দ্র করে নির্মাতা সাঈদুর রহমান সাঈদ নির্মাণ করছেন চলচ্চিত্র ‘মধুর ক্যান্টিন’। এতে গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন মৌসুমী।






২৫ নভেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যান্টিনসহ আশপাশের এলাকায় শুরু হয় ছবির শুটিং। প্রথম দিনেই অংশ নেন মৌসুমী।
শুটিংয়ের বিরতিতে ক্যান্টিনের একটি কক্ষে বসেই প্রিয়.কমের মুখোমুখি হন এ নায়িকা। বেশ কিছুক্ষণের ওই আলাপে তিনি জানিয়েছেন ছবিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণ।
আলাপের শুরুতেই ছবিতে অভিনয়ের প্রসঙ্গ ও নিজের চরিত্র নিয়ে অভিনেত্রী মৌসুমী বলেন, ‘মধু দা ও মধুর ক্যান্টিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু বিষয় ছবিতে উঠে আসবে। এ ছাড়া ছাত্ররাজনীতির সেই সময়কার কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাও আসবে। আর মধু দাকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রও ছবিতে আসবে, যারা অবশ্যই তাৎপর্য বহন করে। ওই রকম একটা চরিত্রে আমি এ ছবিতে অভিনয় করছি।’
ছবিতে মৌসুমী একজন বীরাঙ্গনা নারীর সন্তান, মানে যুদ্ধশিশু, যাকে সমাজের অন্যদের সঙ্গে সেই মা পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন না। এরপর তার মা তাকে একটি পরিবারের কাছে দত্তক দিয়ে দেন, যারা তাকে নিয়ে কলকাতা চলে যায়।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন। সেই ক্যান্টিনের মধু দাকে নিয়ে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় দেখা যাবে ওমর সানিকে।
আলাপের এক পর্যায়ে চরিত্রটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলাদা করে কথা কথা বলছিলেন মৌসুমী। আর চরিত্রটি প্রসঙ্গে বিস্তারিত বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যে কিনা কলকাতাতে বড় হয়; জীবনের একটা সময় গিয়ে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়।’
‘আর অনেক বছর পর সে জানতে পারে, তার আসল বাবা-মা বেঁচে আছে। তারা বাংলাদেশে বসবাস করে। কলকাতায় যাদের কাছে সে বড় হয়েছে, তারা আসল বাবা, মা না। তার মা একজন বীরাঙ্গনা। এ কথা জানার পরই সে বাংলাদেশে চলে আসে।’
‘বাংলাদেশে এসে সে (যুদ্ধশিশু) তার মাকে খুঁজে বেড়ায়। সেই খোঁজাখুঁজির সময়ের কিছু চিত্র এ ছবিতে আসবে। মেয়েটা যে তার মাকে খুঁজে বের করার একটা আকুতি, তাও দেখানো হবে। সব মিলিয়ে শেকড়ের প্রতি যে তার একটা টান, তাও দেখানো হবে এই ছবিতে।’
রাজনীতি, সংস্কৃতি চর্চা ও আড্ডার জন্য মধুর ক্যান্টিনের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। সেই হামলার শিকার হয় মধুর ক্যান্টিন।
মৌসুমী জানান, ছবিটিতে তার চরিত্রের শৈশব-কৈশোরের কোনো চিত্র দেখানো হবে না। তাই আলাদা করে প্রস্তুতির তেমন কোনো বিষয় নেই। মানে একজন জার্নালিস্ট তার পেশাগত ও ব্যক্তিজীবনে ঠিক যেমন সে সব উঠে আসবে। তবে এতে আরোপিত কিছু আসবে না।
‘এখানে কোনো নায়িকা চরিত্র বা কোনো দর্শকনন্দিত ক্যারেকটার করছি না। চরিত্রটা গল্পের খুব ইমপরট্যান্ট একটা জায়গাজুড়ে আছে। সে জন্য আমার দিক থেকে চরিত্রটা ধারণের বিষয়ে সচেতন থাকার চেষ্টা করছি। তারপরও তো নির্মাতার চরিত্রটা নিয়ে একটা পোট্রেট করা আছে। সেটার বাইরে তো যাব না’, বলেন মৌসুমী।
কথা প্রসঙ্গে মৌসুমী জানান, এ ছবিতে তার চরিত্রটার নাম এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে চরিত্র ধারণের জন্য ফটোগ্রাফির বিষয়টা তাকে আলাদা করে রপ্ত করতে হবে। কিন্তু সেটা মৌসুমীর রপ্ত করা আছে।
তিনি বলেন, ‘ফিল্মের সাথে যেহেতু অনেক দিন থেকেই আছি, তাই খুঁটিনাটি বিষয়গুলোতে সমস্যা হবে না। এটা খুব টিপিক্যাল কোনো ক্যারেকটার না। তবে আমি চেষ্টা করব কলকাতার ভাষাটা একটু ব্যবহার করার জন্য।’
এই ছবিতে ১৯৬৬ সাল থেকে ছয় দফা, ১১ দফা আন্দোলনের ইতিহাস থাকবে। পাশাপাশি সেই সময়ের প্রেম ও ভালোবাসার বিষয়গুলোও উঠে আসবে ছবিতে। গল্পটিতে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত উঠে আসবে।
প্রায় ৩০০ ছবিতে অভিনয় করা চলচ্চিত্রের এ নায়িকা মধু দাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য মধু দার যে স্যাকরিফাইস, সেটা তো আমাদের কোনো বইয়ে নেই। তবে আমাদের প্রাকটিক্যাল লাইফে মধু দা ইমপরট্যান্ট একটা বিষয়।’
সব মিলিয়ে চরিত্রটাকে চলচ্চিত্রে আনার খুবই দরকার ছিল। কাজটা যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিকঠাকভাবে শেষ করতে পারি, তাহলে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।’
‘যদিও বিষয়টা আরও আগেই চলচ্চিত্রে আসার দরকার ছিল। কারণ মধুর ক্যান্টিনের ভূমিকা আমাদের জাতীয় জীবনে ঠিক কেমন, তা আমরা জানি। আমি মনে করি মধুর ক্যান্টিনের যে বিষয়গুলো চলচ্চিত্রে আসবে, সে বিষয়গুলো অবশ্যই যৌক্তিক।’
ছবিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে মৌসুমী বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, যেহেতু ঐতিহাসিক একটা কাজ হচ্ছে, সে জন্য হলেও কাজটা করা উচিত। এরপর দেখা যাক কী হয়। তবে আমি কাজটা নিয়ে বেশ আশাবাদী।’