





জীবনের বিভিন্ন সময়ে সবমিলিয়ে প্রায় ১২ বার আত্মহ’ত্যা করার কথা ভেবেছিলেন এই সময়ের






জনপ্রিয় অ’ভিনেত্রী ও মডেল শবনম ফারিয়া। তিনি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ তথ্য শেয়ার করেছেন।






সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কেন ও কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই ধরণের চিন্তা করেছিলেন।






ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফারিয়া লিখেছেন, ‘শুনতে খুব সহ’জ শোনালেও যিনি বিষয়টার মধ্য দিয়ে যায় সেই






জানে এইটা নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন কতটা কঠিন! আমা’র প্রথম ডিপ্রেশন (বিষন্নতা) শুরু হয়






২০১৫ সালে, একটা “সামান্য” ব্রেকআপ্রের। যদিও এখন সামান্য বলছি, তখন বিষয়টা মোটেও সামান্য ছিল না।






সে সময় আমি কিংবা আমা’র পরিবার বুঝতে পারেনি যে আমা’র সেই অস্বাভাবিক আচরণ, রুমের মধ্যে নিজেকে বন্ধ করে রাখা, সারাক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করা, বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার না করে ফেসবুকে সংবেদনশীল কথাবার্তা লিখে ফেলা, রাতের পর রাত ঘুম না হওয়ায় শুটিংয়ের সেটে খিটখিটে মেজাজে থাকা বিষন্নতার একটা বহি:প্রকাশ! সেই বিষন্নতা প্রায় ছয় মাসের মতো ছিল। আমা’র বাবা-মা’র চেষ্টায় অনেকটাই স্বাভাবিক হয়।’
পরের আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করে জনপ্রিয় ওই অ’ভিনেত্রী লিখেছেন, ‘দ্বিতীয়বার আবার বিষন্নতা বুঝি বাবা মা’রা যাওয়ার পর। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিল, আর আমা’র বাবাকে যারা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন শুধু তারাই জানে আমা’র বাবা আর আমা’র বন্ধুত্বের পরিধি। বাবার মৃ’ত্যুর পর আমা’র মনে হলো আমা’র আসলে কেউ নেই। মা’র কিছু হলে আমা’র কী’ হবে!
কিন্তু ততদিনের আমা’র মা এবং আমি দুজনই বুঝে গেছি যে আমি বিষন্নতায় আমা’র মা অনেকটা জো’র করেই আমাকে বাবা চলে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই কাজে পাঠায়। তখন যেটা হলো কাজে থাকলে আমি সব ভুলে যাই। যেহেতু আমা’র পেশাটাই অদ্ভুত একটা পেশা। যে সেট এ ঢুকলেই আম’রা অন্য কেউ হয়ে যেতে পারি! কিন্তু বাসায় ফিরলে সেই একই অনুভূতি। আমা’র মা কিন্তু আর সেই রিস্ক নেয়নি। আমাকে “ক্লিনিকেল সাইকোলজিস্ট” এর কাছে পাঠান এবং ২/৩ বার কথা বলার পরেই আমা’র বিষন্নতা সে বারের মত চলে যায়।’
হঠাৎ করে আত্মহ’ত্যার বিষয়ে তিনি কেনো লিখছেন, তা জানিয়ে ফারিয়া লিখেছেন, ‘এখন কথা হলো এ কথা কেন বলছি (লেখা)! কারণ সেই প্রথমবারের ছয়মাস বিষন্নতায় থাকা অবস্থায় কম করেও কমপক্ষে ১২ বার আমি সুই’সাইডের কথা ভেবেছি! ঘুমের ওষুধের পাতা হাতে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে নিজের সাথে নিজে যু’দ্ধ করেছি। সেসময় আমি যদি চলে যেতাম, তাহলে কি আজকে আমি শবনম ফারিয়া হতে পারতাম? আপনার আমাকে চিনতেন?
অচেনা-অজানা এতো মানুষের ভালবাসা পেতাম? একজন মানুষের ভালবাসা পাইনি বলে এতো এতো ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হতাম? আর এখন যে মানুষটি আমা’র হাতটা ধরেছে, আমা’র সব স্বপ্নের সঙ্গী, তাকেই বা পেতাম কোথায়? অন্তত তার সাথে অকারণেই ঝগড়াগুলো কিভাবে করতাম? জীবনকে সুযোগ দিতে হয়, ভুল করতে হয়, ধাক্কা খেতে হয়, নয়তো তুমি যখন অনেক বড় কেউ হবে, তোমা’র বায়োপিকে কী’ লিখবা?’
জীবনটা চ্যালেঞ্জিং ও বিভিন্ন কিছু মোকাবেলা করতে হয় জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, ‘এসব ঘটনা না থাকলে তো বোরিং হয়ে যাবে। বলিউডের সঞ্জয় দত্তের এমন অঘটন না ঘটালে আম’রা সাঞ্জু’র মত অসাধারণ সিনেমা কোথায় পেতাম! কিংবা বাবার চলে যাওয়ার পর যদি কিছু করতাম তাহলে আমা’র মা’র কী’ হতো একবার ভাবতে পারেন, আমা’র মা’র পৃথিবী আমাকে ঘিরে, আমা’র কিছু হলে তার কী’ হতো! প্রত্যেকটা বাবামা’র সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তার সন্তান। তবে একেকজনের প্রকাশ ভঙ্গি একেক রকম! কেউ আদর করে কপালে চুমু দিয়ে বলে, বাবা হোমওয়ার্কটা করতে যাও। আবার কেউ চি’ৎকার দিয়ে বলে গালি দিয়ে বলে, এখনো পড়তে বসলি না? কিন্তু দুজনের উদ্দেশ্য কিন্তু একই।’
পারিবারিক জীবনের টুকরো ঘটনা জানিয়ে তিনি লিখেছেন,’আমা’র মা যেমন নামাজ নিয়ে কিঞ্চিত যন্ত্র’না দেয়। যখন মুড ভাল থাকে “বাবা নামাজটা পড়ো, সব সমস্যার সমাধান এইটা, বাবার কথা মনে পড়লে নামাজে বলো, আল্লাহ্ বাবার কাছে তোমা’র মনের কথা পৌঁছে দেবে। আর মেজাজ খা’রাপ থাকলে পশ্চিম দিকে তো আছাড়ও খাও না, তোমা’র সমস্যা হবে না কে তো কার হবে। কিন্তু ভেবে দেখেন সে আমা’র ভাল চায় বলেই এমনটা বলে! এই অ’ত্যাচারের মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক ভালবাসা।’
মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে বাঁচতে হলে অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয় উল্লেখ করে ফারিয়া লিখেছেন, ‘যাই হোক যু’দ্ধের ময়দান ছেড়ে পালানো খুব সহ’জ, কিন্তু যু’দ্ধে জয়ী হওয়া কঠিন। কিন্তু যদি ক’ষ্ট করে একবার তুমি জিতে যাও, সারা পৃথিবী তোমাকে মনে রাখবে, কিন্তু যদি পালাও, মানুষ ৪০ দিন মনে রাখবে তাও কাপুরুষ হিসাবে! অরিত্রী নামের মে’য়েটা কে যদি টিসি দেয়া হতো, তাহলে কি এমন হতো? বাবা-মা একটু বকা দিত!
পাশের বাসার আন্টি দুই চারটা কথা বলতো! কিন্তু অরিত্রী যদি অন্য স্কুল থেকে পরিক্ষা দিয়ে ভাল রেজাল্ট করতো, কেউ কোনদিন এই ঘটনা মনেও রাখতো না! এই যে ওর ক্লাস টিচারকে এরেস্ট করা হয়েছে, উনি কি কারো মে’য়ে না? কারো মা না? তাদের অসন্মান হচ্ছে না? এইযে প্রিন্সিপালকে গালি দিচ্ছে, শাড়ি ধরে টানছে, সে কি কারো মে’য়ে না? তার অসন্মান হচ্ছে না? শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এইটা একটা শিক্ষাও বটে! লেবু বেশি কচলালে তিতা হয়ে যায়! শিক্ষা জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ কোন স’ন্দেহ নেই। কিন্তু এইটাই সব না! সবার A+ পাওয়াটা ফরয কিছু না! কিছু হলে বাবা-মা ডেকে এনে অ’পমান এই কালচার এই উপমহাদেশ ছাড়া আর কোথাও নেই। একটা ক্লাস নাইনের বাচ্চা যদি নকল করে (ধরে নিলাম করেছে) সেইটার দ্বায়ভা’র তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিতে হবে!
তারা শেষ ১০ বছরে কি মোরাল শিক্ষা দিয়েছে??? বরং বাবা-মা উল্টো ক্লেইম করবে আপনাদের মতো স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমা’র বাচ্চাকে কী’ শিখালো যে সে নকলের করার মতো একটা অন্যায় করতে পারলো! আমি যখন কলেজে পড়তাম আমি নিজেও মোবাইল ক্যারি করায় ক্লাস টিচারর জি এম স্যার এর কাছে ধ’রা পরি! চট্রগ্রাম ক্যান্টমেন্ট পাবলিক কলেজ যথেস্ট কড়া থাকায় আমা’র ৭ দিন পর অ’ভিভাবককে কল করে, তাদের বুঝিয়ে বলেন যেন আমাকে আর কলেজে ক্যারি করতে না দেয়।’
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কী’ ধরণের আচরণ করা উচিত, তা জানিয়ে ফারিয়া লিখেছেন, ‘সেখানে কাউকে ছোট করার চেয়ে জরুরি ছিল আমা’র জন্য কোনটা ভাল তা নিশ্চিত করা। আমা’র বাবা মা’র মতো আমা’র শিক্ষকরাও যে আমাকে নিয়ে কনসার্ন তা বোঝানো! আর বাবা মায়েরও সন্তানদের পরিবর্তন গুলোর দিকে নজর দেয়া উচিত, মানসিক যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রেও শারিরীক সমস্যার মতো চিকিৎসকের পরাম’র্শ নেয়া জরুরী! এটা কোন লজ্জ্যার কিংবা লুকানোর কিছু না! এবং শিক্ষা আপনার সন্তানদের ভবিষৎ এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তার মানসিক সুস্থতার চেয়ে বেশি নয়!’