





রূপালি পর্দায় নব্বই দশকের জনপ্রিয় জুটি নাঈম-শাবনাজ। পরিচালক এহতেশামের ‘চাঁদনী’ সিনেমা






দিয়ে অভিষেক দু’জনের। ‘দিল’, ‘জিদ’, ‘অনুতপ্ত’, ‘সোনিয়া’, ‘সাক্ষাৎ’, ‘টাকার অহংকার’,






‘ফুল আর কাঁটা’, ‘চোখে চোখেসহ ২০টির মতো সিনেমায় জুটি বেঁধেছিলেন এই নায়ক-নায়িকা।






বাস্তবেও নাঈম-শাবনাজ দু’জন-দু’জনার জীবনসঙ্গী। সুখের সংসার সাজিয়েছেন দু’জনে। সিনেমা করতে






গিয়েই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও প্রেম গড়ে ওঠে। ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। তাদের ঘরে রয়েছে দুই কন্যাসন্তান, নামিরা ও মাহদিয়া। বর্তমানে নাঈম-শাবনাজ চলচ্চিত্রাঙ্গন ছেড়ে দূরে আছেন। নাঈম মনোযোগী তার ব্যবসা নিয়ে এবং শাবনাজ ব্যস্ত সংসার নিয়ে।
সম্প্রতি ছোট মেয়ে মাহদিয়ার সঙ্গে ব্যান্ড রেঁনেসার ‘ভালো লাগে জোছনা রাতে’ গানটি গেয়ে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন নাঈম। প্রশংসিত হয় বাবা-মেয়ের গাওয়া রেঁনেসার গানটি। পরিচালক মালেক আফসারীও সেই গানে খুবই আবেগ-আপ্লুত। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি। স্মৃতিচারণা করে মালেক আফসারী বলেন, একসময় ‘প্রেমপত্র’ নামে নাঈম-শাবনাজ জুটিকে নিয়ে একটি সিনেমা বানানোর কথাও ভেবেছিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে নাঈম-শাবনাজের সঙ্গে কথাও হয়েছিল এই পরিচালকের। কিন্তু শেষমেষ আর বাস্তবায়ন হয়নি। মালেক আফসারী জানান, প্রযোজকের বাজেটের অভাবেই ‘প্রেমপত্র’ সিনেমাটি আর বানাতে পারেননি তিনি। চিত্রনাট্য এখনো রয়ে গেছে পরিচালকের হাতেই।
‘প্রেমপত্র’ গল্পটি নিজের জীবন থেকে নেয়া, এমনটা দাবি করে মালেক আফসারী বলেন, ‘নেপালি একটা মেয়ের সঙ্গে আমার জীবনের প্রথম সম্পর্ক হয়। নাম ছিল ‘শান্তি’। আমি তখন ঢাকা শহরে আর থাকতে পারছিলাম না, পারিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে। আমার পরিবার (বাবা-মা) আমাকে টাকা দিতে পারছিল না, তাই আমি দেশে চলে যাই। তখন বর্ষাকাল ছিল। আর সে সময় চিঠির প্রচলন ছিল, তো শান্তি আমাকে চিঠি লিখতো। আর আমি তখন আমার গ্রাম (বসন্তপুর, নোয়াখালী) থেকে কাদাবৃষ্টিতে হেঁটে, একটা ছাতা মাথায় নিয়ে, লুঙ্গিটা একটু তুলে গিট্টু দিয়ে, খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে ছাতারপাইয়া বাজারের কাছে (আড়াই মাইল দূর হবে) পোস্ট অফিসে যেতাম চিঠির জন্য। আর পোস্ট অফিস বলতো যে আজকে তো আপনার চিঠি আসে নাই। আমি প্রতিদিনই যাইতাম। দুই-তিন দিন পরপরই আমার চিঠি আসতো। সেখান থেকেই আমার গল্পটা নেয়া। আমি নিজেই লিখি প্রেমপত্রের গল্প।’
‘প্রেমপত্র লেখা হলো না’ শিরোনামের ভিডিওতে চিত্রনায়ক নাঈমের সঙ্গে মালেক আফসারীর কথাও উঠে আসে।
‘নাঈমকে আমি প্রথম দেখি খান আতা স্যারের স্টুডিওতে। আমি, এন্ড্রু কিশোর ও প্রয়াত আবু তাহের একটা গানের সুর নিয়ে বসেছিলাম। হঠাৎ সেখানে এসে হাজির ফজলে হক (চলচ্চিত্র সম্পাদক ও পরিচালক)। তিনি নিয়ে আসেন নাঈমকে। কোনো একটা কাজে তারা আসছিলেন, তখন আমাদের সঙ্গে দেখা। আমি না ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকি। নরমাল হাইট (উচ্চতায় স্বাভাবিক), একদম সাহেবের বাচ্চার মতো দেখতে। পুরো ফরেইনার, গালটাল লাল। মনে হয় যেন মেকআপ করে আসছে, আসলে না! সুন্দর ফর্সা একটা ছেলে। এবং হাঁটা-চলাফেরা-কথাবার্তায় একটা অন্যরকম ধাঁচ পেলাম। না, এই ছেলে তো সহজ না; পরে খোঁজখবর নিলাম। ফজলে হক সাহেবকে আলাদা করে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, কে? বললোÑ ‘নতুন নায়ক, এহতেশাম দাদুর সিনেমায় নায়ক হবে।’ আলাপে জানলাম, তিনি নবাব ফ্যামিলির একজন ছেলে। এবং জামা-কাপড়, চলাফেরায় সেই এলিট ভাবটা ছিল তার মধ্যে। আমার খুবই ভালো লাগছে।’
একসময় পত্রিকায় নাঈম-শাবনাজের প্রেমের গুঞ্জন ওঠে। সেই দিনগুলোতেই এই জুটিকে নিয়ে সিনেমা বানানোর কথা ভেবেছিলেন পরিচালক মালেক আফসারী। আসাদ গেটে শাবনাজের বাসাতে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ডেকে নিয়েছিলেন নাঈমকে। কথায় কথায় নাঈম-শাবনাজের সঙ্গে চুক্তিও হয় মালেক আফসারীর। নায়ক-নায়িকার দাবি ছিল চার লাখ-চার লাখ করে আট লাখ। কিন্তু এক পর্যায়ে সেই আর্থিক বিষয়ে ছাড় দেন নাঈম-শাবনাজ। বলেন, সাড়ে তিন করে সাত লাখ টাকার কথা। মালেক আফসারীও রাজি হয়ে যান। ভাবেন, প্রযোজক হয়তো রাজি হয়ে যাবেন। এক লাখের জন্য আর না করবেন না। কিন্তু সেই প্রযোজক ছিলেন নাছোড়বান্দা, বাজেট আর বাড়াননি তিনি। একপর্যায়ে নাঈমকে চিঠি লেখেন মালেক আফসারী। বলেন, ‘নাঈম তোমাদের নিয়ে আমার আর প্রেমপত্র লেখা হলো না।’ প্রযোজক যে বাজেট বাড়ায়নি সেই কথাটি লজ্জায় সেদিন চেপে যান পরিচালক মালেক আফসারী।